লামা প্রতিনিধি ::
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সাবেক মহকুমা লামাকে পূণরায় জেলা ঘোষণার দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে গণ আবেদন দেয়া শুরু করেছে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাবাসী। বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিবের মাধ্যমে এ আবেদন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিন উপজেলার সহ¯্রাধিক আবেদন জমা পড়েছে বলে লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন। এদিকে লামাকে জেলা ঘোষনার দাবীতে গত ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর দুই দিন ব্যাপী সড়ক অবরোধ, ২৯ ডিসেম্বর মুক্ত আলোচনা ও বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচীও পালন করা হয়। প্রাপ্ত গণ আবেদন প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এম. ওুহুল আমিন ও মহা সচিব মো. কামরুজ্জামান।
আবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সার্বিক উন্নয়নের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, গজালিয়া ও বাইশারী থানার সমন্বয়ে লামাকে মহকুমায় উন্নীত করে। সেই সাথে ৮১ সালের ৪ এপ্রিল লামা ও বান্দরবান মহকুমাকে নিয়ে বান্দরবান মহকুমাকে সরকার জেলায় উন্নীত করে তৎকালীন সরকার। পরে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় দেশের সকল মহকুমাকে বিলুপ্ত করে জেলায় রূপান্তর করার ঘোষনায় একই সাথে লামা মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হলে ৮৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজার ও লামা মহকুমাকে শুভ উদ্বোধনের দিন ধার্য্য করে প্রশাসনিক সকল দপ্তর কার্যক্রম ও জনবল নিয়োগও দেয়া হয়। কার্যক্রমও চলে বেশ কয়েক দিন। হঠাৎ করে শুভ উদ্ভোধনের দুই দিন পূর্বে সরকার অজ্ঞাত কারণে লামা জেলা রূপান্তরের কার্যক্রম স্থগিত করে। পরবর্তীতে গজালিয়া ও বাইশারী থানার কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়। এতে জনমনে চাপা ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি সহ সচেতন জনগন প্রতিবাদ মুখর হলে তৎকালীন এরশাদ সরকার লামাকে জেলা ও থানা সমূহ পূণ:বহালের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু অদ্যাবদি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।
গণ আবেদনে সাবেক লামা মহকুমা সদরকে প্রশাসনিক জেলায় উন্নীত করণ ও সৃজনের বেশ যুক্তি তুলে ধরেন আবেদনকারীরা। যুক্তি সমূহ হচ্ছে- বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাবেক লামা মহকুমা সদরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার, আলীকদম উপজেলা দূরত্ব প্রায় ১২৩ কিলোমিটার, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। তিন উপজেলার অধিবাসীদের প্রতিদিন কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা অতিক্রম করে জীবনের ঝুকি নিয়ে ৩-৪টি যানবহন পরিবর্তন পূর্বক বান্দরবান সদরে গিয়ে প্রশাসনিক, ভূমি বিরোধ ও বিবিধ মামলা মোকাদ্দমা পরিচালনা করতে হয়। অথচ আলীকদম থেকে লামা মাত্র ২৩ কিলোমিটার এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। লামার সাথে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির সাথে রয়েছে অভ্যন্তরীন সড়ক। তাই লামাকে জেলা করলে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িসহ তিন উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এদিকে এরশাদ সরকার লামা সদরকে মহকুমায় উন্নীত করার পর ১৯৮০-১৯৮১ সালে লামা মহকুমা প্রশাসন, লামা মহকুমা পুলিশ সুপার,কৃষি বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগসহ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের মহকুমা দপ্তর, মহকুমা আনসার ভিডিপি দপ্তর, মহকুমা কারাগার সহ বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরের জন্য প্রায় ৫ শতাধিক একর জায়গা হুকুম দখল করে স্থাপনা নির্মানের পর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে ওই জায়গাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। অনেক জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে লামাকে জেলায় উন্নীত করা হলে দু একটি দপ্তর ছাড়া আর কোন দপ্তর নির্মাণ, স্থান ও জায়গার কোন সমস্যা হবে না।
আবেদনে তারা আরও উল্লেখ করেন-বর্তমানে সাবেক লামা মহকুমা তথা লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় প্রায় এক হাজার রাবার বাগানে প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদন, বিপনন ও প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে প্রাকৃতিক রাবার শিল্প এলাকা বা অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করে শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে দেশে রাবারের চাহিদা পূরণ, শতশত কোটি টাকার রাজস্ব আয় ও হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় জেলা প্রশাসন মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়া লামায় প্রায় ২০ হাজার একর পাহাড়ী ভূমিতে প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদনে পাশাপাশি ব্যাপকভাবে আম, কাঠাঁল, লেবু, আনারস, কমলা, কূল, লিচু, হলুদ, আদা, কাঁচা মরিচ সহ শত শত একর জায়গায় বিভিন্ন ফলজ বাগানে ফলফলাদি উৎপাদিত হচ্ছে। এতে দেশের চাহিদা ও পূরণসহ হিমাগারও প্রক্রিয়া জাতকরনের জন্য কারখানা স্থাপন করা হলে হাজার হাজার লোকের বেকারত্ব দুর হবে। তাছাড়া লামা মহকুমা এলাকায় দেশের প্রায় অর্ধেক তামাক জাত পন্য উৎপন্ন হচ্ছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। ভবিষ্যতে প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি পেলে তামাক শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে এবং এতেও হাজার হাজার লোকের বেকারত্ব দূরীকরণ হবে।
লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির মহা সচিব মো. কামরুজ্জামান বলেন- লামা মহকুমায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ তেল, গ্যাস, পাথরী কয়লার খনি উত্তোলন, খনন ও বিপননে জেলা প্রশাসন ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। লামাকে জেলায় রূপান্তর করা হলে অত্র অঞ্চলে দ্রুত পর্যটন শিল্প বিকাশ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ হবে। পাশাপাশি দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়ন, জননিরাপত্তা উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়ন সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল পাহাড়ী দরিদ্র জনগন ভোগ করতে পারবে। পাশাপাশি দূর্গম এলাকার বসবাসকারী জনগনে জান মালের নিরাপত্ত, চাঁদাবাজি, গুম, অপহরণ সংগঠিত অপরাধ, দমন, নিয়ন্ত্রণ, জেলা প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনী যথাযথ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে। মোট কথা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে লামাকে পূণরায় জেলা ঘোষনা করা হলে- পাহাড়ী ও বাঙ্গালীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সাম্প্রাদায়িক সম্পৃতি সুরক্ষার উন্নয়ন এবং শান্তিপূর্ন্য পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে জনস্বার্থে সরকার লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায় পৃথক আরও দুইটি উপজেলা ও ৪টি প্রশাসনিক পুলিশ থানা/তদন্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ আরো ৪-৫টি ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এতে প্রশাসনিক ও সীমানা বিরোধের কোনো জঠিরতা সৃষ্টি হবে না। এতে দেশ আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে।
পাঠকের মতামত: